রাজশাহীরাজশাহী সংবাদরাজশাহী সংবাদ

৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রুয়েট শিক্ষকের বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি (রুয়েট) বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল আলিম নামের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে সাড়ে সাত কোটি টাকা ব্যাংকে রেখেই প্রকল্প সমাপ্তি প্রতিবেদন দেওয়ায় অর্থ তছরুপের অভিযোগ উঠেছে।

আব্দুল আলিম পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক পদে থেকে এ অনিয়ম করেন। তিনি রুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক। প্রকল্প পরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ২৬ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে রুয়েটের গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক বিভাগ চালুকরণ সাব-প্রকল্পে সাত কোটি ৫৬ টাকার অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নেন তিনি।

নিয়ম অনুযায়ী, সরকারি কোনো প্রকল্প সমাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে সেই প্রকল্পের সব টাকা শেষ করতে হয়। অথবা অতিরিক্ত টাকা থাকলে তা সরকারকে ফেরত দিতে হয়। কিন্তু ২০১৬ সালের ৩০ জুন ওই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও ব্যাংকে জমা ছিল ১৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া ওই বছরের ৯ আগস্ট প্রকল্প সমাপ্তি প্রতিবেদন দাখিলের পাশাপাশি ‘কোনো অর্থ অবশিষ্ট নাই’ মর্মে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। প্রকল্পের পরিচালক আব্দুল আলিম নিজেই ওই প্রতিবেদন দাখিল করেন। কিন্তু পূবালী ব্যাংক রুয়েট শাখার দেওয়া প্রতিবেদনে দেখা যায়, তখনো ওই প্রকল্পের আওতায় ব্যাংকে ১৩ কোটি ১৩ লাখ ৩৩ হাজার ৪১৪ টাকা গচ্ছিত ছিল। জানা যায়, এর পরও কাজের কিছু বকেয়া বিল পরিশোধ করা হয়।

তবে সমাপ্তি প্রতিবেদনের পরে ২০১৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি প্রকল্প সমাপ্তি পরিদর্শনের দিন পর্যন্ত ব্যাংকে জমা ছিল সাত কোটি ৫৬ লাখ ১০ হাজার ৫৮১ টাকা, যা সরকারি প্রকল্পের অর্থ আইনে বড় ধরনের অনিয়ম।

রুয়েট শিক্ষক আব্দুল আলিমের এমন বড় ধরনের অনিয়ম খতিয়ে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তিন সদস্যের একটি দল আজ রুয়েটে আসছে। গত ১৯ মে ইউজিসির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার উপপরিচালক রোকশানা লায়লা স্বাক্ষরিত ওই চিঠিটি রুয়েটের পরিকল্পনা ও উন্নয় বিভাগের পরিচালককে দেওয়া হয়। তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ইউজিসির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক ফেরদৌস জামান।

এদিকে পূবালী ব্যাংক রুয়েট শাখার দেওয়া প্রতিবেদনে দেখা যায়, রুয়েটের গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক বিভাগ চালুকরণ সাব-প্রকল্পের পরিচালক প্রকল্প শেষ হওয়ার প্রতিবেদন দাখিলের পর ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত পাঁচ বছরে কয়েক দফায় ৪৯টি চেকের মাধ্যমে সাত কোটি ছয় লাখ টাকা তুলে নেন। সর্বশেষ ২০২০ সালের ৩০ জুনেও ওই হিসাবে ৫০ লাখ ৩৬ হাজার ৫৮৯ টাকা গচ্ছিত ছিল।

সূত্র মতে, যে চেকগুলো দিয়ে প্রকল্পের মেয়াদকালের শেষেও টাকা তোলা হয়েছে, সেগুলোর তারিখে কাটাকাটি ছিল। প্রকল্পের পরিচালক আব্দুল আলিম নিজ হাতে তারিখ কেটে নতুন করে তারিখ বসিয়ে চেকে একক স্বাক্ষর করেছেন।

এ ব্যাপারে জানতে ইউজিসির প্রশাসন ও অর্থ বিভাগের সদস্য আবু তাহের বলেন, যখন কোনো প্রকল্পের সার্বিক বিষয় শেষ হয়ে যায়, তখন কোনো অর্থ অতিরিক্ত থাকলে তা সরকারকে ফেরত দিতে হয়। এটি না করা মানে অর্থ তছরুপের শামিল। প্রকল্প বুঝে দেওয়ার পরে আর কোনো অর্থ গচ্ছিত রাখার এখতিয়ার নেই।

তবে বিষয়টি নিয়ে জানতে প্রকল্প পরিচালক আব্দুল আলিমকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো অনিয়ম করিনি। এ ব্যাপারে আমাকে চিঠিও দেওয়া হয়নি। চিঠি দেওয়া হয়েছে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালককে। আমি তো এখন আর ওই পদে নাই। তবে ওই সময় ছিলাম। কিন্তু এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতেও চাই না।

এ ব্যাপারে আরও জানতে চাইলে রুয়েট ভিসি রফিকুল ইসলাম সেখ বলেন, একটি প্রকল্পের বড় ধরনের অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেটি তদন্তে ইউজিসির একটি টিম আসছে। তবে ওই সময় আমি ভিসির দায়িত্বে ছিলাম না বলে জানান রুয়েট ভিসি রফিকুল ইসলাম সেখ ।

এই ধরণের সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button