চাপাইনবাবগঞ্জরাজশাহীসংবাদ সারাদেশসারাদেশ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক ওয়ার্ডে চার প্রার্থীর লড়াই

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এক ওয়ার্ডে মেম্বার প্রার্থী হয়েছেন ৪ জন। তারা ২ পরিবারের সদস্য। এর মধ্যে এক পরিবারে রয়েছে চাচা-ভাতিজা, অন্য পরিবারে জামাই-শ্বশুর। তবে ২ পরিবারের চাচা ও শ্বশুর দীর্ঘদিনের জনপ্রতিনিধি। আর ভাতিজা এবং জামাই ১ম বারের মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

এই চার জনই এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচন করছেন। দুই পরিবারের ৪ জন প্রার্থীর এ ভোটের লড়াইয়ে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে স্থানীয় ভোটারদের মাঝে।

নেজামপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের চার প্রার্থী হলেন- গোসাইপুর গ্রামের আলবক্স মণ্ডলের ছেলে সাবেক ইউপি সদস্য (৬০) মোঃ আব্দুল খালেক ফিটু, তার ভাতিজা (৩৮) বছরের সাফিউল আলম সেলিম, কাজলকেশর গ্রামের ইসমাইল মণ্ডলের ছেলে বর্তমান ইউপি সদস্য (৫০) বছরের তোসলিম উদ্দীন এবং তার আপন ভাইয়ের জামাই (৪২) বছরের মোঃ আলী হোসেন।

এর মধ্যে দীর্ঘ ১৪ বছর এই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ছিলেন চাচা আব্দুল খালেক ফিটু। পেশায় কৃষি কাজও করেন আব্দুল খালেক ফিটু। আব্দুল খালেক ফিটু হলেন নাচোল উপজেলা যুবলীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক। এছাড়া তিনি দীর্ঘদিন ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। আব্দুল খালেক ফিটু মোরগ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তার আপন ভাতিজা সাফিউল আলম সেলিমের প্রতীক টিউবওয়েল। তিনি এবার প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। চাচার বিরুদ্ধে ভোটে অংশ নিলেও চাচার মতোই তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে, কাজলকেশর গ্রামের বর্তমান ইউপি সদস্য তোসলিম উদ্দীন টানা ১১ বছর ধরে এ ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যর দ্বায় ভার গ্রহণ করে আসছে । প্রথমবার পরাজিত হলেও পরের দুইবার নির্বাচনে জয়লাভ করেন তিনি। স’ মিলের মালিক শ্বশুর তোসলিম উদ্দিনের প্রতীক ফুটবল। তার জামাই আলী হোসেন এবার প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তার প্রতীক বৈদ্যুতিক পাখা।

স্থানীয় বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব তরিকুল ইসলাম বলেন, চাচা-ভাতিজা, জামাই-শ্বশুর ভোটে দাঁড়ালেও এখন পর্যন্ত কোনো অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়নি তাদের মধ্যে। সবাই নিজেদের মতো প্রচার-প্রচারণা নিয়ে ব্যাস্ত সময় পার করছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে জনগণের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন। স্থানীয় এলাকাবাসী আশা করেন এই ইউপি নির্বাচনে এবার জমজমাট লড়াই হবে। কারণ ৪ জনের মধ্যে ২ জন নতুন মুখপ্রার্থী এবং অন্য ২জন দীর্ঘদিনের নির্বাচিত ইউপি সদস্য। স্থায়ী জনগণ নতুন না পুরাতন প্রার্থীর ওপর ভরসা করবে তা ২৬ ডিসেম্বর ভোটের দিনই দেখা যাবে।

চা দোকানদার সাদিকুল ইসলাম বলেন, ভোটের চেয়ে চাচা-ভাতিজা, জামাই-শ্বশুরকে নিয়েই বেশি আলোচনা হচ্ছে। একটি পরিবারে এমন হলে সাধারণত সমালোচনা হয়। কিন্তু যেহেতু দুটি পরিবারে এমন ঘটনা তাই যোগ্যতা, অযোগ্যতা নিয়ে আলোচনা করছেন স্থায়ী ভোটাররা। এখন পর্যন্ত আমাদের এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।

সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল খালেক ফিটু বলেন, আমার একমাত্র ভাইয়ের ছেলে সাফিউল আলম সেলিম। পারিবারিকভাবে কয়েকবার আলোচনায় বসে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য বলেছিলাম। কিন্তু সে জানিয়েছে, নির্বাচন করবেই তিনি। যেহেতু কথা শুনেনি, তাই আর কিছু বলতে যাইনি। তবে এ নিয়ে পারিবারিক সম্পর্ক খারাপও হয়নি। সে তার মতো কাজ করছে, আমি আমার মতো নির্বাচনী প্রচারণার কাজ করছি।

বর্তমান ইউপি সদস্য শ্বশুর তোসলিম উদ্দিন বলেন, টানা ১১ বছর ধরে আমি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণের সেবা করে আসছি। এলাকার রাস্তাঘাট, মসজিদ, মাদরাসা, সেতু নির্মাণে নিরলসভাবে নির্মাণ করেছি। এছাড়া বরেন্দ্র অঞ্চলের জন্য বিশেষ ভূমিকা নিয়ে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেছি। এসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেখে জনগণ ইনশা আল্লাহ আমাকে পুনরায় নির্বাচিত করবেন বলে আমি আশাবাদী।

একই গ্রামের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জামাইকে নিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনে আলী হোসেন আমার প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও সম্পর্কে সে আমার জামাই। সে আমার আপন ভাতিজির স্বামী। নির্বাচনে অংশ নেয়া নিয়ে পারিবারিক সম্পর্কে কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না। ২৬ ডিসেম্বর জনগণের দেওয়া রায় মেনে নেব।

জামাই আলী হোসেন বলেন, জনগণ নতুন কাউকে চান। জনগণের সেই চাহিদা থেকে আমি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। একই গ্রামে একজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আমার শ্বশুর। আমার বাড়ি থেকে তার বাড়ি দেখা যায়, এত অল্প দূরত্বে আমাদের বাড়ি। আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক খুব ভালো রয়েছে। আশা করি, নির্বাচনের পরও তা অটুট থাকবে।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোতাওয়াক্কিল রহমান বলেন, চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে নাচোল ও ভোলাহাট উপজেলার আট ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ হবে। এ লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

এই ধরণের সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button