সংবাদ সারাদেশসারাদেশ

চাঁদপুরে ছেলেকে হত্যার দায়ে মায়ের মৃত্যুদণ্ড

চাঁদপুর প্রতিনিধিঃ

চাঁদপুরের হাইমচরে ভাড়াটিয়া লোকদের দিয়ে আপন ছেলে মো. আরিফ হোসেনকে (২৫) হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মা খুকি বেগম ও আসামি মো. জয়নাল গাজীকে মৃত্যুদণ্ড এবং সহযোগী দুই আসামি ইউছুফ মোল্লা এবং মাহবুব মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা ও অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

আজ বুধবার দুপুরে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (১) ফারহানা ইয়াসমিন এ রায় দিয়েছেন।

হত্যার শিকার আরিফ হোসেন জেলার হাইমচর উপজেলার দক্ষিণ আলগী ইউপির মাছুম খান বাড়ির মিজানুর রহমান খানের ছেলে ও মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত খুকি বেগমের ছেলে। অপর মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি মো. জয়নাল গাজী পার্শ্ববর্তী ফরিদগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম লাড়ুয়া গ্রামের গাজী বাড়ীর গণি গাজীর ছেলে।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্তরা হলেন, ফরিদগঞ্জ উপজেলার উত্তর বিষকাটালি গ্রামের মোল্লা বাড়ির হোসেন মোল্লার ছেলে ইউছুফ মোল্লা ও একই গ্রামের বিল্লাল মোল্লার ছেলে মাহবুব মোল্লা।

জানা গেছে, হত্যার শিকার আরিফ হোসেন, মা খুকি বেগমের সঙ্গে আসামি জয়নাল গাজীর পরকীয়া সম্পর্কের কথা জানতেন। এই বিষয়ে মা ছেলের সম্পর্কের অবনতি হয়। ২০১৫ সালের শুরুতে ছেলে আরিফ হোসেন প্রেমের সম্পর্ক করে পার্শ্ববর্তী উত্তর আলগী ইউপির মিজি বাড়ির আব্দুস সালাম মিজির মেয়ে আসমা আক্তারকে বিয়ে করেন। তাদের বিয়ে মা খুকি বেগম প্রথমে মেনে না নিলেও এক পর্যায়ে মেনে নেন।

এরপর মা, ছেলে ও ছেলের বউ এর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে জগড়া বিবাদ হতো। এরই মধ্যে মা খুকি বেগম ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। ২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর ছেলের বউ আসমাকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেন। এরপর ১৮ নভেম্বর পরিকল্পিত ভাবে মা খুকি বেগম নিজ গৃহে পরকীয়া প্রেমিক জয়নাল গাজী ও তার সহযোগীদের দিয়ে আরিফকে ঘুমন্ত অবস্থায় হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে, কুপিয়ে এবং ব্লেড দিয়ে আঘাত করে পরে তার মৃত্যু হয়েছে মনে করে ঘরের মেঝেতে ফেলে চলে যায়।  

১৯ নভেম্বর সকালে খুকি বেগম আরিফের স্ত্রী আসমাকে ফোন করে জানায় ডাকাতরা আরিফকে জখম করে ফেলে গিয়েছে। আসমা তাৎক্ষণিক স্বামীর বাড়িতে চলে আসে এবং আরিফকে উদ্ধার করে প্রথমে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখান থেকে ঢাকা নেয়ার পথে মতলব ফেরিঘাটে পার হওয়ার পর সকাল ৯টার দিকে আরিফের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ঐ দিনই আসমা শাশুড়ি খুকি বেগম সহ অজ্ঞাতনামা ব্যাক্তিদের আসামি করে হাইমচর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এই মামলাটি তদন্ত করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয় হাইমচর থানার তৎকালীন এসআই মো. নুর মিয়াকে। তিনি মামলাটি দীর্ঘ এক বছর তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ৯ নভেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

মামলার সরকার পক্ষের আইনজীবী সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) বদিউজ্জামান কিরন বলেন, এটি একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড। মায়ের পরকীয়ার জন্য এ ঘটনা ঘটে। মামলাটি দীর্ঘ ৭ বছরের অধিক সময় চলাকালীন সময়ে আদালত ২০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। স্বাক্ষ্য গ্রহণ ও মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করে আসামিদের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় এই রায় দিয়েছে। আসামিদের মধ্যে ইউছুফ মোল্লা পলাতক। বাকীরা জামিনে থাকলেও রায়ের সময় সব আসামি অনুপস্থিত ছিলেন।

আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন মো. জয়নাল আবেদীন বলেও জানান তিনি।

এই ধরণের সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button