রাজশাহী সংবাদসংবাদ সারাদেশসারাদেশস্লাইডার

এমন নববর্ষ আর যেনো ফিরে না আসে মানুষের জীবনে

শামিরা ইসলামঃ

প্রতি বছর পহেলা বৈশাখ যে উৎসব আর উন্মাদনা নিয়ে আসে মানুষের জীবনে, এবার এর উল্টো চিত্র বাংলা ভাষাভাষী প্রতিটি জনপদে। এই বৈশাখের প্রথম দিনে পান্তা-ইলিশের উৎসব নেই, কোথাও বসেনি গ্রাম্য মেলা কিংবা পুতুল নাচের আসর। রমনার বটমূলে হয়নি বর্ষবরণ, মঙ্গল শোভাযাত্রার মুখোশ পরে সবাইকে ঘরে বসে থাকতে হয়েছে। আর এর মাঝে এসেছে করোনা সংক্রমণে ৭ জনের মৃত্যুর খবর। এমন বিষন্ন নববর্ষ কেউ কোনদিন ফেরত চাইবে না!

নতুন বছর মানেই নতুন স্বপ্ন আর নতুন সম্ভাবনা। অথচ একবিংশ শতকের প্রথম মহামারীর ছোবলে সব স্বপ্ন আর সম্ভাবনা ফিকে হয়ে গেল। ফলে আজ কোথাও উৎসব হলো না, কোথাও শোনা গেল না সুখী কৃষকের গান। বরং পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে আজ চোখ রাঙিয়ে গেল এক অদৃশ্য শত্রু।

এক বছর আগেও বর্ষবরণের দিনে রাজধানী ঢাকা সেজেছিল বর্ণিল সাজে। রঙিন বেলুন হাতে তরুণ-তরুণীরা ঘুরে বেরিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে, উদ্যানে আর পথে প্রান্তরে। পিতার আঙুল ধরে উৎসবের ভাষা চিনে নিয়েছিল সন্তান। রঙিন পোশাক পরে অবোধ কিশোর এসেছিল রমনায়। যেখানে রোদের উত্তাপ থেকে প্রিয়তমকে বাঁচাতে আঁচলের ছায়া বিছিয়ে দিয়েছিল মায়াময়ী প্রেম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, একটি দিনের সঙ্গে আরেকটি দিনের যেমন পার্থক্য রয়েছে, তেমনি একটি বছরের সঙ্গে আরেকটি বছরের পার্থক্য রয়েছে। এটি সময়ের বৈশিষ্ট্য। অনেকগুলো বছর বৈশাখে আমরা আনন্দ আর উৎসব করে কাটিয়েছি, কিন্তু এবার ঘরে থাকতে হচ্ছে। এটা সময়ের প্রয়োজন। এই প্রয়োজন পূরণ করা না গেলে আমাদেরকে ভুগতে হবে।

শিল্পকলার এই অধ্যাপক আরো বলেন, এমন নববর্ষ আর যেন কোনদিন ফিরে না আসে। মঙ্গল শোভাযাত্রা, রমনার গান আর মানুষের আনন্দবিহীন বৈশাখের প্রথম দিনকে মোটেও নববর্ষ মনে হয়নি। আর সবার মত আমারও তাই দিনটি কেটেছে নিরানন্দে।

ছায়ানটের সভাপতি সনজীদা খাতুন ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, আমরা এখন এক অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করছি। এই লড়াইয়ে মানুষকে জিততে হবে। বর্ষবরণ করতে না পারার আক্ষেপ থেকে যাবে, তবে মানুষ জিতে গেলে আনন্দ পাব। এই মহামারী, এই ভয়াল করোনাকাল দ্রুত শেষ হয়ে যাক। আমরা আবারো গানে গানে নতুন বছরকে স্বাগত জানাবো।

অভিনেতা হাসান ইমাম বলেন, নববর্ষের অনুষ্ঠান উদযাপনের স্মৃতিচারণ করে সারাটা দিন কেটে গেল। এ বছর অনেক পরিকল্পনা ছিল, কোনটাই করা হলো না। এই দুঃসহ সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাক। আমরা আবার উৎসব করবো, আনন্দ করবো। আবারো কাঁধে কাঁধ, হাতে হাত মিলিয়ে গাইবো বেঁচে থাকার গান।

তিনি বলেন, আমরা বহুদিন মানুষে মানুষে শ্রেণীবিভাজন করেছি, কিন্তু করোনা এসে বুঝিয়ে দিয়ে গেছে সব মানুষ সমান। এই রোগ সেরে যাওয়ার পর আমরাও যেন সমতা রক্ষা করে চলি। সম্পদের সুষম বন্টন করি। তাহলেই পরের বৈশাখ আরো বেশি বর্ণিল আর আনন্দময় হবে।

এদিকে সমতলের বাঙালিদের মত পাহাড়ের জনজাতি গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসবও একইরকম ফিকে হয়ে গেছে। প্রতি বছর এই সময় সবুজ পাহাড়ি জনপদ উৎসবে মুখর থাকলেও এবার মহামারীর প্রভাবে পাহাড়ে উৎসবের উৎসাহ থেমে গেছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বেশিরভাগ পরিবারই কাপ্তাই লেকের বদলে নিজেদের বাড়ির ছাদে পানি ছিটিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, কৃষিকাজের সুবিদার্থে সম্রাট আকবর ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ অথবা ১১ মার্চ বাংলা সন প্রবর্তন করেন। মুঘল এই সম্রাটের সিংহাসন আরোহণের সময় থেকে হিজরি চান্দ্রসন ও সৌরসনকে ভিত্তি করে বাংলা সন প্রবর্তিত হয়। সনটি প্রথমে ফসলি সন নামে পরিচিত ছিল।

এই ধরণের সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button