সংবাদ সারাদেশসারাদেশ

অবশেষে জল্পনা-কল্পনা ছাড়িয়ে ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন-মো. সাহাবুদ্দিন

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

সোমবার (২৪শে এপ্রিল- বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং রাজনীতিবিদ মো. সাহাবুদ্দিন এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন। গতকাল (২৪শে এপ্রিল ২০২৩) সকাল ১১টায় বঙ্গভবনের ঐতিহাসিক দরবার হলে রাষ্ট্রপতিকে শপথবাক্য পাঠ করান জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

রাষ্ট্রীয় এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও শতাধিক বিশিষ্ট অতিথি উপস্থিত ছিলেন সে সময়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

এর আগে, কালো মুজিব কোট এবং সাদা পাঞ্জাবি পরে নতুন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও স্পিকারকে নিয়ে সকাল ১০টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে প্রবেশ করেন। সে সময় একটি সামরিক ব্যান্ড আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত পরিবেশন করেন।

শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পর নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও বিদায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অফিসের দায়িত্ব পরিবর্তনের অংশ হিসেবে আনুষ্ঠানিক ভাবে নিজ-নিজ আসন বদল করেন। পরে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন এবং স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী শপথ নথিতে স্বাক্ষর করে। রাষ্ট্রপতি শপথ গ্রহণের পর অতিথিদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের স্ত্রী ড. রেবেকা সুলতানা এবং ছেলে আরশাদ আদনান রনিসহ পরিবারের সদস্যরা ও বিদায়ী রাষ্ট্রপতি হামিদের পরিবারের সদস্যরা, তাঁর স্ত্রী রাশিদা খানম এবং ছেলে রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক সহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন এ সময়।

ডেপুটি স্পিকার, সংসদে বিরোধী দলের উপনেতা জি এম কাদের, জাতীয় সংসদের হুইপ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, কূটনৈতিক মিশনের প্রধান, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান, প্রতিমন্ত্রী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, বিভিন্ন ট্রাইব্যুনাল বা কমিশন বা ইনস্টিটিউটের প্রধানগণ, জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ৩বাহিনীর প্রধানগণ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা, বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকার সম্পাদকসহ সিনিয়র সাংবাদিক এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক-সামরিক কর্মকর্তাসহ প্রায় ১১০০ জনেরও বেশি আমন্ত্রিত অতিথি অনুষ্ঠানটি প্রত্যক্ষ করেন। এর আগে ৭৩ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ ২০২৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়াারি বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন ১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর পাবনা শহরের শিবরামপুরের জুবিলী ট্যাংক পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ডাক নাম চুপ্পু। পিতা শরফুদ্দিন আনছারী, মাতা খায়রুন্নেসা। তিনি ১৯৭৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরে এলএলবি ও বিসিএস (বিচার) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। মো. সাহাবুদ্দিন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, পাবনা জেলা ছাত্রলীগ এবং যুবলীগের সভাপতি ছিলেন তিনি। জেলা বাকশালের যুগ্ম-সম্পাদক এবং জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন সে। রাষ্ট্রপতি ছেষট্টির ৬ দফা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন তিনি।

সে পাবনা জেলার আন্দোলন-সংগ্রামের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ সহ সে সময় সামরিক স্বৈরশাসকদের রোষানলে ৩ বছর জেল খাটেন এবং অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়ে ছিলেন। তিনি দৈনিক বাংলার বাণীতে সাংবাদিকতাও করে ছিলেন। তাঁর অনেক কলাম বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ছাপা হয়েছে। কর্মজীবনে তিনি জেলা এবং দায়রা জজ ও দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবেও সে দায়িত্ব পালন করেছেন।

রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন পরপর ২বার বিসিএস (বিচার) এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হয়। চাকরি থেকে অবসরের পর হাইকোর্টে আইন পেশায় নিযুক্ত হয়ে ছিলেন। পরবর্তীকালে ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সে। দুদক কমিশনার হিসেবে তিনি পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিরুদ্ধে উঠা তথাকথিত দুর্নীতির ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় দৃঢ়তার পরিচয় দিয়ে ছিলেন।

সাবেক এই ছাত্রনেতা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ও কেন্দ্রীয় প্রচার এবং প্রকাশনা উপ-কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ছিলেন। এবার জল্পনা-কল্পনা ছাড়িয়ে দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করলেন ।

এই ধরণের সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button