বাগমারারাজশাহীরাজশাহী সংবাদরাজশাহী সংবাদ

বাগমারায় চিকিৎসকের অবহেলায় সিজার কালে প্রসূতির মৃত্যু

বাগমারা প্রতিনিধিঃ

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার সূর্যের হাসি ক্লিনিকে চিকিৎসকের অবহেলায় সিজার কালে ১৬ বছর বয়সি পপি খাতুন নামে এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

গতকাল মঙ্গলবার (২ আগস্ট) বেলা ২ টার দিকে আচিনঘাটে অবস্থিত সূর্যের হাসি ক্লিনিকে ওই প্রসূতির মৃত্যু হয়। নিহত পপি খাতুন মোহনপুর উপজেলার জাহানাবাদ ইউনিয়নের দরুজপাড়া গ্রামের কৃষক আকাশের স্ত্রী।

নিহত পপি খাতুনের দুলাভাই মোস্তকিন জানান, তার শ্যালিকার প্রসব ব্যাথা শুরু হলে সোমবার রাতে আচিনঘাটে সূর্যের হাসি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে মঙ্গলবার বেলা ২ টার দিকে বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে অস্ত্রপাচারের (সিজার) মাধ্যমে পপি খাতুনের এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। সন্তান জন্ম দিলেও মা হওয়ার সাধটা আর পেলেন না পপি খাতুন।চিরদিনের মতো অজ্ঞান হয়ে পড়েন তিনি।

নিহত প্রসূতির মৃত্যুর পূর্বের ঘটনার খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, নিহত পপির সিজার করতে সাড়ে ৯ হাজার টাকা চুক্তিবদ্ধ হয় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের সাথে। ১৩ হাজার টাকা রেট থাকলেও গরিব হওয়ার কারনে কয়েক হাজার টাকা ছাড় দেয়া হয়। সে মোতাবেক পপির নিকট থেকে ৩১০ টাকা ভর্তি ফি নিয়ে সিজার শুরু করে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। চুক্তির টাকা বাড়ি যাওয়ার সময় পরিশোধ করতে হবে।

প্রসূতি পপি খাতুনের এমন মৃত্যুর ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে এবং নিজেকে বাঁচাতে চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম কৌশলে উন্নত চিকিৎসার কথা বলে সূর্যের হাসি ক্লিনিকের নিজস্ব এ্যাম্বুলেন্সে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পপিকে মৃত বলে ঘোষনা করেন।

এদিকে সিজারিয়ান চিকিৎসক না হয়েও শতশত প্রসূতির সিজার করছেন ওই মেডিকেল অফিসার রফিকুল ইসলাম। এর আগেও তিনি ওই ক্লিনিকে রোগী মেরে ফেলেছেন ভুল সিজার করে। তার বিরুদ্ধে অনেকেই অভিযোগ তুলেছেন তিনি রোগীকে পরিপূর্ণ অবস না করেই সিজার আরম্ভ করেন। তিনি নিজে অবসের ডাক্তার না। অথচ টাকার বিনিময়ে তিনি সিজার করে চলেছেন। প্রতি জন গর্ভবতির সিজারে তাকে দিতে হয় সাড়ে ৩ হাজার টাকা।

এ ঘটনার ওই চিকিৎসক রফিকুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি সিজার করে চলে আসার পর কি হয়েছে তা বলতে পারবো না। পরে জানতে পেরেছি রোগীটি মারা গেছে। সিজারিয়ান চিকিৎসক না হয়েও কেন সিজার করছেন এমন প্রশ্নের জবারে তিনি বলেন, সেটা কি আপনার কাছ থেকে শিখতে হবে। সিজার করতে না পারলে কি করতাম।

মাঝে মধ্যেই চিকিৎসক রফিকুল ইসলামের হাতে রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।এসময় দ্রুত ওই ডাক্তার ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করেন এলাকাবাসী।

এ বিষয়ে সূর্যের হাসি ক্লিনিকের এডমিন আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাগমারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার রফিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন থেকেই আমাদের ক্লিনিকে সিজার করে আসছেন। এরকম ঘটনা মূলত ঘটেনা। নিহত গৃহবধূ পপির সিজারও করেন তিনি। সিজার কালে রোগীর অবস্থার অবনতি হলে ক্লিনিকের পক্ষ থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এই ব্যাপারে আরও জানতে চাইলে,উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ গোলাম রাব্বানী বলেন, রফিকুল ইসলাম হচ্ছে মেডিকেল অফিসার। তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজার করেন না। রফিকুল ইসলাম কোন সিজারিয়ান ডাক্তার না। তিনি যদি নিজ দ্বায়িত্বে কোথাও সিজারিয়ান অস্ত্র পাচার করে থাকেন তবে সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এ ব্যাপারে লিখিত কোন অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তবে এ ঘটনায় পরিবারের কোন অভিযোগ না থাকায় লাশ দাফনের অনুমতি দেয়া হয়েছে বলে জানান মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

এই ধরণের সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button