রাজশাহীতে যুবক হত্যার মামলায় ফাঁসলেন চার আসামী
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
রাজশাহীর পবা উপজেলায় হত্যার ঘটনাকে সড়ক দুর্ঘটনার নাটক সাজিয়েও রক্ষা পেলনা আসামীরা। হত্যার ঘটনা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আসামী সজল। এবং হত্যার ৪ আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা হলেন, সবুজ আলী (২৮), কাওসার আলী (৪২), সজল আহম্মেদ (২৮) এবং সুইটি খাতুন (২২)। সবুজ আলী রাজশাহী মহানগরীর এয়ারপোর্ট থানার পশ্চিম বাঘাটা গ্রামের মৃত আবেদ আলীর ছেলে, কাওসার আলী পবা উপজেলার মহানন্দাখালী গ্রামের মৃত হারুন অর রশিদের ছেলে, সজল একই এলাকার মৃত শহিদুল্লাহের ছেলে এবং তার স্ত্রী সুইটি।
ঘটনা সূত্রে জানাযায়, গত ১ জুলাই বেলা সাড়ে ৩টার দিকে রাজশাহীর পবা থানা নওহাটা গামী রাস্তায় মধ্য বয়সী অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তিকে গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন ।
তবে নিহতের প্যান্টের পকেটে পাওয়া করোনার টিকা কার্ড দেখে জানা যায় নিহতের নাম সুলতান আলী। সে রাজশাহী জেলার বাঘা থানার আড়ানী গ্রামের নবীর আলীর ছেলে।
সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতের সময় লাশের কপালের বাম পাশে ও গলায় আঘাতের চিহ্ন থাকায় সন্দেহ হলে পুলিশ লাশের পোস্টমর্টেম করায়। গত ২২ জুলাই চিকিৎসকরা পোস্টমর্টেম রিপোর্ট থেকে জানা যায় সুলতানকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় মৃত সুলতানের স্ত্রী অজ্ঞাতনামা কয়েক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করলে গত ২৪ জুলাই পবা থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হয়।
মামলার রুজু পর উপ-পুলিশ কমিশনার (শাহ্মখদুম) নূর আলম সিদ্দিকীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (শাহ্মখদুম) এএইচএম আসাদ হোসেনের নেতৃত্বে ওসি শেখ মোবারক পারভেজ, তদন্তকারী অফিসার এসআই মো: মোস্তাফিজার রহমান ও তার টিম মামলার রহস্য উদ্ঘাটন-সহ আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে।
পবা থানা পুলিশের ঐ টিম গত ২৪ জুলাই আরএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সহায়তায় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে নিজ বাড়ি থেকে আসামীদের গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত আসামী সজল ও তার স্ত্রী সুইটির রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আসামীদের আদালতে সোপর্দ করলে আসামি সজল আজ খুনের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে বলেন, মৃত সুলতান ঢাকার একটি গার্মেন্টসে চাকরির সুবাদে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে বসবাস করতো। ২ মাস পূর্বে মোবাইল ফোনে আসামী সজলের স্ত্রী সুইটির সাথে সুলতানের পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে সুলতান দেখা করার জন্য প্রায়ই সুইটিকে বলতেন। সুইটি দেখা করতে রাজি না হলে সুলতান সুইটির ৩ বছরের বাচ্চার ক্ষতি করার হুমকি দেয়।
সুইটি বিষয়টি তার স্বামী সজলকে জানালে সজল সুলতানকে শায়েস্তা করার জন্য পরিকল্পনা করে আসামি সজল তার স্ত্রী সুইটির মাধ্যমে সুলতানকে রাজশাহীতে দেখা করার জন্য আসতে বলে। গত ১ জুলাই সুলতান সুইটির সাথে দেখা করার জন্য রাজশাহীতে আসেন। তখন সুইটি তাকে পবা ও তানোর থানার সীমান্তবর্তী নাইস গার্ডেনে নিয়ে যায়। নাইস গার্ডেন তারা পৌঁছার পর পরিকল্পনা মোতাবেক সজল, তার বন্ধু সবুজ ও চাচা আনারুলকে সাথে নিয়ে নাইস গার্ডেনে প্রবেশ করে সুলতানকে জোরপূর্বক অটোরিক্সায় করে নওহাটার দিকে নিয়ে যান।
এসময় আসামীরা তাকে মারপিট করে ও তার পরিবারের লোকজনদের আসতে বলেন। এতে সুলতান রাজি না হলে দুপুর ৩টায় পবা থানার বাগসারা বাজার পার হয়ে ফাঁকা জায়গায় অটোরিক্সার ভিতরে আসামীরা সুলতানের হাত, পা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরবর্তীতে হত্যার বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য দুর্ঘটনার নাটক সাজিয়ে তারা রাস্তায় চলন্ত ট্রাক দেখে সুলতানের লাশ ট্রাকের সামনে ফেলে দেয়। ফলে ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে সুলতানের মাথায় যখম হলে আসামীরা পালিয়ে যান।
পরে সাধারণ লোকজন ঘটনাস্থলে এসে ট্রাকের সাথে ইজি বাইকের দুর্ঘটনার কারণে সুলতান মারা গেছে বলে পবা থানা পুলিশকে খবর দেয় এবং পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করেন।
এই হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকল আসামীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান আছে বলেও জানান পুলিশ।