গরুর ব্যবসা করে শুনাম কুড়ালেন রাজশাহীর রবিউল
শাহিন খানঃ
জীবিকা নির্বাহের জন্য অনেকেই করছেন ব্যবসা, কৃষি কাজ, কেউ বা আবার চাকরি, সহ ছোট বড় নানা কাজ আবার কেউ-কেউ পাড়ি দিচ্ছেন দুর প্রবাসে। সবাই নিজের কর্মের মাধ্যমে তার অবস্থা পরিবর্তনের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন প্রতিনিয়ত।
ঠিক তেমনি একজন রাজশাহীর পবা উপজেলার কর্ণহার থানার দারুসা বাজারের রবিউল ইসলাম, তিনি গরুর ব্যবসার পাশাপাশি খামার দিয়ে করেছেন ভাগ্যের পরিবর্তন।
সরেজমিনে তার খামারে গিয়ে দেখা যায়, লাল, সাদা কালো সহ বিভিন্ন জাতের নানা রঙের আকর্ষণীয় বেশ কিছু উন্নত জাতের গরুর বাছুর রয়েছে । এরমধ্যে উল্লেখ যোগ্য ব্রাহমা, নেপোলিয়ন, শাহীওয়াল, এবং ফ্লেকভি। তার খামারে ৬০-৭৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২ লক্ষ্য ৬৫ হাজার টাকা পর্যন্ত গরুর বাছুর রয়েছে। তিনি এই বাছুর গুলো নিজ খামার সহ দেশের বিভিন্ন হাটে নিয়ে বিক্রি করে থাকেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য রাজশাহী সিটি হাট।
জানতে চাইলে রবিউল ইসলাম বলেন, তিনি ২০১২ সালে মাত্র দুই এক টা করে গরু কেনা বেচা শুরু করেন, এ ভাবে তিলে-তিলে গড়ে তুলেছেন ভাই ভাই এগ্রো ফার্ম নামে গরুর খামার। খামারে থাকা গরুর বাছুর গুলোকে দেশীয় পদ্ধতিতে পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি।
তিনি জানান, প্রতি বছর কোরবানির ঈদ উপলক্ষে তিনি তার পছন্দ মত গরু কিনে রাজশাহীর দামকুড়ায় আরো একটি খামারে ঈদের কয়েক মাস আগে থেকে গরু প্রস্তুত করা শুরু করেন। এবার কোরবানি ঈদেও তিনি ৭০ টি গরু বিক্রি করেছেন দেশের বিভিন্ন জায়গায়, কিন্তু এবার গরুর বাজার খারাপ যাওয়াতে খুব একটা লাভ হয়নি তার, তবে আগামীতে লাভ হবে এমনটি আশাবাদী তিনি।
রবিউল ইসলাম বলেন, তিনি গরীব ঘরের ছেলে অভাবের সংসারে খুব একটা লেখাপড়া করতে পারেননি, তাই চাকরির পেছনে না দৌড়ে, নিজের মনোবল নিয়ে মাত্র ১২০০ টাকা দিয়ে শুরু করে ছিলেন গরুর ব্যবসা। এক পর্যায়ে গরুর খামার দিতে মন স্থির করেন। পরে রাজশাহী প্রাণিসম্পদ অফিসের কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে অল্প কিছু গরু দিয়ে যাত্রা শুরু করেন। এবং প্রথম বছরেই তিনি খামার থেকে এক অভাবনীয় সাফল্য পান। এরপর তার মনোবল বেড়ে যাওয়ায় খামারে গরু সংগ্রহ করেন। সেখানে কোনো প্রকার ক্ষতিকর ট্যাবলেট ও ইনজেকশন ছাড়াই সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক খাদ্যে নিয়মিত যত্নে খড়, তাজা ঘাস, খৈল ভূষি, চালের কুড়া, ভুট্টা, ভাত সহ পুষ্টিকর খাবারের মাধ্যমে গরুর বাছুর গুলোকে লালন পালন করছেন।
রবিউল ইসলামের খামারে বর্তমানে বিভিন্ন জাতের ১৬টি বছুর রয়েছে আরও বাছুর সংগ্রহ করা হচ্ছে, এবং সেখানে কিছু শ্রমিক কাজ করছেন। তারা বাছুরকে খাওয়ানো, গোসল করানো, অসুস্থতার দিকে নজর রাখা সহ খামারের পরিবেশ ভেতর-বাইরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা সহ মশা-মাছি, পোকামাকড় প্রতিরোধেও দিনে রাতে সার্বিকভাবে তারা দায়িত্ব পালন করছেন তারা।
এরইমধ্যে ভাই ভাই এগ্রো খামারটি পবা উপজেলা সহ সারা রাজশাহী জুড়ে আদর্শ খামারি হিসেবে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। সৎ ভাবে গরুর ব্যবসা করায় এলাকায় ব্যাপক সুনাম কড়িয়েছেন রবিউল ইসলাম।
সফল গরু ব্যবসায়ী হিসাবে রবিউল ইসলামের পরামর্শ, শিক্ষিত বেকার যুবকরা চাকরির জন্য ঘুরে-ঘুরে হতাশ না হয়ে সঠিক ভাবে গরুর খামার বা যে কোন ব্যবসায় নজর দিলে নিজের সাফল্য অর্জন করতে পারবে।
রাজশাহী প্রাণিসম্পদ অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, রবিউল ইসলামের খামার নিয়ে আমরা খুবই গর্বিত। ব্যক্তি উদ্যোগে বিশাল গরুর খামার স্থাপন করে তিনি এলাকায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন । কঠোর পরিশ্রম ও ধৈর্য থাকলে জীবনে সফলতা আসে, রবিউল ইসলাম তার অনন্য উদাহরণ।