ঢাকা

সাভারে শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা,চার দিনেও গ্রেফতার হয়নি আসামি

মোঃ নাসমি খান, সাভার প্রতিনিধিঃ

সাভারের আশুলিয়ায় কলেজ শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার চার দিন পার হয়ে গেলেও এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। যার ফলে নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ
করেছেন।

আশুলিয়া থানা এলাকায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

ওই কলেজের শিক্ষক,শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী কলেজ প্রভাষককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত বলে অভিযোগ তুলেছেন। বাইরে থেকে ক্রিকেট স্ট্যাম্প সংগ্রহ করে ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে ওই শিক্ষার্থী মারধর করেছেন বলে দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের। কলেজ অধ‌্যক্ষ সাইফুল হাসানও একই দাবি করেছেন।তবে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর বাড়িতে গিয়ে কাউকে না পাওয়ায় তার পরিবারের কোনও মন্তব্য মেলেনি।

সকালে আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকায় নিহতের সহকর্মী, শিক্ষার্থী,প্রত্যক্ষদর্শী, স্কুলের স্টাফ ও স্থানীয়দের সাথে কথা হয় সংবাদ চলমান এর।

এসময় পূর্বপরিকল্পিত ক্ষোভে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম জিতু হাজি ইউনুস আলী স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে মারধর করেছে এ বিষয়টি পরিষ্কার হয়।

এলাকাবাসী বলছে,একজন শিক্ষককে এভাবে হত্যার বিষয়টি কোনওভাবে মেনে নেওয়া যায় না। আমরা কেউ মেনে নিতে পারিনি। কিন্তু আসল ঘটনা এখনও কলেজের শিক্ষকরা বলছেন না। তারা অনেক কিছু গোপন করছেন। তবে আস্তে আস্তে সব বেরিয়ে আসবে। অভিযুক্ত শিক্ষার্থী জিতুর বাবা উজ্জ্বল হোসেনের ব্যবসায়িক পার্টনার মাজেদ নামে এক ব্যক্তি। তাদের মূলত হোটেল ব্যবসা আছে। সেই মাজেদের একজন শ্যালিকার ছোট বোন এই
কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ে। তার সাথে অভিযুক্ত জিতুর অনেক আগে থেকেই প্রেমের সম্পর্ক। কিছুদিন আগেও স্কুলের একটি কক্ষে জিতু ও মেয়েকে অপ্রীতিকর অবস্থায় পাওয়া যায়। তখন শিক্ষক উৎপল তাদের শাসিয়ে দেন।
এমনকি ওই শিক্ষক মেয়ের পরিবারের কাছে ফোন করে সব জানিয়ে সতর্ক করেও দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে মেয়েটা অভিযুক্ত জিতুকে এসব বিষয় জানালে সে ক্ষুব্ধ হয়েই ওই স্যারকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। তারা আরও বলেন, খেলার দিন আগে থেকেই কলেজের বাইরে স্ট্যাম্প নিয়ে ঘুরছিলেন জিতু। তার সাথে আরও তিন জন যুবক ছিল। ঘটনার পরপর তারাচার জন একসাথে হেঁটে চলে যায়।

ওই কলেজে প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত এক শিক্ষার্থী বলেন, জিতুর সাথে তাদেরই কলেজের এক মেয়েকে স্কুলকক্ষে একসাথে পাওয়ার পর স্যার মেয়ের পরিবারকে জানায়। স্যার মেয়ের বাসায় ফোন করে শক্তভাবে বিচার দিয়েছিল। যাতে মেয়েটা জিতুর সাথে না মেশে। এটার ক্ষোভ থেকেই জিতু স্যারকে খেলার দিন পিটিয়েছে।

ওই শিক্ষকের ওপর হামলা চালানোর বিষয়ে আগে থেকে ঠিক করে রেখেছিলেন শিক্ষার্থী জিতু। তার প্রমাণ মেলে কলেজের সিসিটিভি ফুটেজ খুঁজতে গিয়ে। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানান, ওই দিনের ঘটনার আগে থেকে সিসিটিভি ফুটেজে কিছুই রেকর্ড হয়নি বিদ্যুৎ না থাকার কারণে। তবে পরিকল্পনামাফিক অভিযুক্ত শিক্ষার্থী জিতু কলেজের বিদ্যুতের মেইন সুইচ কৌশলে কোন এক সময় নামিয়ে দিয়েছিলেন। যার ফলে ওই সময়
সিসিটিভি বন্ধ ছিল।

এদিকে,চিত্রশাইল এলাকার হাজী ইউনুস আলী স্কুল এন্ড কলেজ পরিদর্শন করেছেন আশুলিয়া থানার একাধিক পুলিশ। এসময় আশুলিয়া থানার ওসি তদন্ত জিয়াউল ইসলাম বলেন অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তারে তাদের তিন থেকে চারটি টিম আলাদা করে কাজ করছে। খুব শিগগির তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। ঘটনার তিন দিন পরে শিক্ষককে পেঠানোর ষ্টামটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। এছাড়াও শিক্ষককে হত্যার ঘটনায় আশুলিয়া উত্তাল হয়েছে প্রতিবাদে হাজি ইউনুস আলী স্কুল এন্ড কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলছে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল।

নিহত ৩৫ বছর বয়সী শিক্ষক উৎপল সরকার সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার এঙ্গেলদানি গ্রামের মৃত অজিত সরকারের ছেলে। তিনি প্রায় ১০ বছর আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকার হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

এই ধরণের সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button