মেধাবী শিক্ষার্থীর স্বপ্নের আকাশে কালো মেঘ!
মেহেরপুর প্রতিনিধিঃ
অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করে তোলার স্বপ্ন মনের ভেতর লালন করত মেধাবী মেঘলা। সেই স্বপ্ন নিয়ে এতদিন পড়াশুনায় এগিয়ে চলেছে মুজিবনগর উপজেলার রতনপুর খ্রীষ্টান পল্লীর শারীরিক প্রতিবন্ধী মাইকেল মন্ডলের মেয়ে মেঘলা।
চলতি বছরের এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়ে স্বপ্নের সিঁড়িতে পা রেখেছে মেঘলা। কিন্তু মেয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে অক্ষম শারীরিক প্রতিবন্ধী বাবা মাইকেল মন্ডল। অক্ষম বাবার দরিদ্রতা যেন মেঘলার স্বপ্নের আকাশে কালো মেঘ হয়ে ধরা দিয়েছে। তাই মেঘলার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত মেঘলাসহ সংখ্যলঘু খ্রীষ্টান পরিবারটি।
সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মায়নি মেঘলা। জন্মেছে মুজিবনগর উপজেলার রতনপুর খ্রীষ্টান পল্লীর শারীরিক প্রতিবন্ধী মাইকেল মন্ডলের ঘরে। শারীরিক প্রতিবন্ধী মাইকেল মন্ডলের চায়ের দোকানের উপার্জন দিয়ে চলে দুই ছেলে-মেয়ের লেখা-পড়াসহ চারজন মানুষের খাওয়া-পরা। তাই বলে কি বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতে নেই?
মেঘলা ছোট থেকে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখত। সে অনুযায়ী পড়ালেখা করে চলেছে। দিনে দিনে সে একজন মেধাবী ছাত্রী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এক ভাই আর এক বোনের মধ্যে ছোট মেঘলা এবারের এসএসসি পরীক্ষায় মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।
২০১৭ সালে একই বিদ্যালয় থেকে সে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৪.৯ পায়। এ ছাড়া নিজ গ্রাম রতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিইসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৫ পায়। এ বছর সে মেহেরপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হয়ে ওই কলেজ হোস্টেলে থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে চায়। তার একমাত্র ভাই ডিপ্লোমা পড়ছে।
বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পড়তে দু’টি বছর প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের টাকা গুনতে হবে মা-বাবাকে। এ চিন্তায় রাতে ঘুমাতে পারছেন না গৃহিনী মা বন্যা মন্ডল। শারীরিক প্রতিবন্ধী স্বামী মাইকেল মন্ডলের আয়ের একমাত্র পথ চা বিক্রি। তার আয়ে সংসার চালাতে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। তাই তিনি কি করে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগাবেন।
অবশেষ বৃহস্পতিবার সকালে মেঘলাকে সঙ্গে নিয়ে বাবা মাইকেল মন্ডল যান মুজিবনগরের ইউএনও উসমান গনি’র কাছে। মাইকেল মন্ডল অশ্রু ভরা নয়নে বলেন, মেয়ের ভালো ফলাফলে বহু মানুষ বাহবা দিচ্ছেন। কিন্তু একজন প্রতিবন্ধী বাবার মেধাবী মেয়ের লেখা-পড়ার খরচ জোগাতে কেউ পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে না। আমিও চাই আমার মেয়ে লেখা-পড়া শিখে অনেক বড় হোক। একদিন সে পরিবারের অভাব দুঃখ ঘোচাবে। কিন্তু আমি কি করে মেয়ের লেখা-পড়ার খরচ জোগাব?
মুজিবনগরের ইউএনও ওসমান গনি বলেন, মেঘলার লেখাপড়ার ভবিষ্যৎ চিন্তা করে বৃহস্পতিবার আমার অফিসে বাবা মেয়ে একসঙ্গে এসে ছিলেন। তারা কেঁদে ফেলেন। দোয়া করি মেঘলা মন্ডলের স্বপ্ন পুরণ হোক, তার বাবার মুখে হাসি ফুটুক। আমি মেঘলার ভর্তির খরচের ব্যবস্থা করে দিতে পারবো। কিন্তু পরবর্তীতে আর্থিক অনটনে তার এ স্বপ্ন অধরা থেকে যাবে না তো বলেও জানান তিনি?